ট্রান্সফারের চাকরির সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস হল, দুই তিন বছর অন্তর ঘরবাড়ি চেঞ্জ করা।যতই বাজে লাগুক উপায় নেই।ব্যাজার মুখে টুটুল ,তার গল্পের বইয়ের তাক থেকে একটা একটা করে বই প্যাক বক্সে ভরা শুরু করল।বউ সামলাচ্ছে বাচ্চা কে।এরপর টুটুল ধরলে তার বউ বাকিটা গুছোবে। মুভার্স এন্ড পাকার্স রা বলেদিয়েছে যে পচ্ছন্দের জিনিস গুলো আলাদা করে রাখতে।কাল ওরা আসবে। তৃতীয় তাকের বইগুলো গুছোতে গিয়ে কোনের দিকে একটা ছোট লাল মলাটের বইয়ের দিকে নজর গেল টুটুলের। হাতে তুলে মলাট উল্টোতেই সময় টা যেন এক ঝটকায় একুশ বছর পিছিয়ে গেল।
উনিশশো ছিয়ানব্বই সাল।জানুয়ারি মাস।ঠান্ডা ভালোই।পাড়া গাঁয়ের দিকে ঠান্ডা ভালোই পড়ে।
সকাল থেকেই বাড়িতে হইহই চলছে।আজ টুটুলের পৈতে। থার্ড জেনারেশনের একমাত্র নাতি সে। মামীমারা দূরের পুকুর থেকে কলসী তে করে জল এনেছে।এতে বেশ কয়েকবার স্নান হবে টুটুলের ।নিচে বাড়ির সামনে একটা ছোট বেদী তৈরি।পুরুত ঠাকুর তার দলবল নিয়ে কাজ শুরু কৱেদিয়েছে।
ক্লাস ফাইভের টুটুল খালি বুঝতে পারছেনা যে এতবার স্নান করতে হবে কেন? তাও শীতকালে !!
ইয়ারকীর ও একটা সীমা থাকে।তার ওপরে ধুতি পরা। আবার নেড়া ও হতে হবে।ইস, বন্ধুরা কি আওয়াজ দেবে!!! এই চিন্তাতেই বিভোর সে।কিন্তু ভীষণ রাগী বাবা কে সে বলতেও পারছে না যে সে নেড়া হতে চায় না।কখনোই চায় না।
এইসব ভাবতে ভাবতেই গায়ে হলুদ হলো, দু তিন দফা স্নান ও হলো।কিন্তু এখনো বমমা আসছে না কেন? টুটুল সেই ভাগ্যবান দের দলে পড়ে যারা নিজেদের ঠাকুমার মা কেও দেখেছে। ঠাকুমা হলো ঠাম্মা আর ঠাকুমার মা হলো বড়মা, সহজে বমমা। আশি বছরের বমমা এখনো সোজা হয়ে হাটে, দারুন হাতের লেখা,একটাও দাঁত নেই,আর হামানদিস্তায় পান থেঁতো করে খায়। টুটুল কেও মাঝে মাঝে দেয়। কাল রাতেই এসেগেছেন তিনি ,সবাইকে বলেদিয়েছেন যে , ওই জিনিসটা টুটুলকে যেন আর কেউ গিফট না দেয়। কিন্তু ওই জিনিসটা কি টুটুল এখনো জানতে পারেনি। কেউ কেউ সাইকেল দেবে বলেছে। একগাদা লোক সকাল থেকে গল্পের বই, পেন , কিলো কিলো রবীন্দ্রনাথ,শরৎচন্দ্র,সুকুমার রায় দিয়েই যাচ্ছে।
এবার ডাক পড়লো নাপিতের কাছথেকে।টুটুলের চোখে প্রায় জল এসেইগেছে। বাবার দিকে একবার তাকালো।কোনো লাভ নেই ।পালানোর উপায় নেই।সদ্য কেনা ক্ষুর সকালের রোদে ঝকমক করে উঠলো আর একটু একটু করে টুটুলের মাথার চুল আর চোখের জল মাটিতে পড়তে থাকলো। গাড়ি প্রায় আদ্ধেক রাস্তা এসেগেছে, হটাৎ ছোটকাকুর গলার আওয়াজ, "একি, এটা কি হচ্ছে!! , বাবু একবার এদিকে তাকা তো ?" অবাক হয়ে টুটুল তাকাতেই খচাৎ, আদ্ধেক নেড়া মাথার অসহায় টুটুলের ছবি তুলে দাঁত বের করে হাসছে ছোটকাকু। দুনিয়াতে একটাও ভালো লোক আর নেই, স্থির সিদ্ধান্ত নিলো টুটুল। এরপর আরো অনেক নাটকের পর ভিক্ষা পর্ব শুরু হলো।খড়ম পরে থালা হাতে ভবতি ভিক্ষাং দেহি শুরু হলো। হাতের আংটি ,নতুন জামা প্যান্টের পিস এইসব শেষে ,টুটুল দেখলো বমমা আসছে এগিয়ে, টুটুলের বুকটা ধুকপুক করে উঠলো, না জানি কি গিফট দেবে বমমা! ফোকলা মুখে একগাল হেসে একটা ছোট্ট বইয়ের প্যাকেট দিয়ে বললো,"মালকড়ি ভেতরে আছে, রাতে দেখিস যখন বাকি বইগুলো দেখবি"।
রাত্রে সব চুকেবুকে যাওয়ার পর নিজের ঘরে একা একা শুয়ে টুটুল একএক করে সব বইগুলো দেখছে।মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হাত বুলিয়ে নিচ্ছে তার নেড়া মাথা। একটা সাদা রঙের নরম টুপি কে যেন দিয়েছে। সেটাই পরে আছে।কিন্তু বালিশে মাথা রাখলেই মনেহয় যেন ফেভিকল দিয়ে সেটে দিয়েছে কেউ।এই সব দুশ্চিন্তা সরিয়ে বমমার দেওয়া প্যাকেট টা খুললো সে, বেরোলো ছোট একটা লাল বই। মলাটে লেখা ,"শ্রীমদভাগবতগীতা" । মলাট ওল্টাতে ই পাওয়া গেল পাঁচশো একটাকা আর বমমা এর হাতে লেখা কয়েকটি লাইন,
"সুস্থ দেহ,শুদ্ধ মতি, ভোগসুখে নাহি রতি,
হও কর্মে ব্রতী,
মানুষ দেবতা হও, শ্রেয়রে জানিতে চাও,
হও মহামতি।"
--এর একটা শব্দও হয়েওঠা হয়নি টুটুলের। অনেক গুলো বছর চলে গেল বমমার পরে, স্মৃতিটুকু আজও অমলিন।
উনিশশো ছিয়ানব্বই সাল।জানুয়ারি মাস।ঠান্ডা ভালোই।পাড়া গাঁয়ের দিকে ঠান্ডা ভালোই পড়ে।
সকাল থেকেই বাড়িতে হইহই চলছে।আজ টুটুলের পৈতে। থার্ড জেনারেশনের একমাত্র নাতি সে। মামীমারা দূরের পুকুর থেকে কলসী তে করে জল এনেছে।এতে বেশ কয়েকবার স্নান হবে টুটুলের ।নিচে বাড়ির সামনে একটা ছোট বেদী তৈরি।পুরুত ঠাকুর তার দলবল নিয়ে কাজ শুরু কৱেদিয়েছে।
ক্লাস ফাইভের টুটুল খালি বুঝতে পারছেনা যে এতবার স্নান করতে হবে কেন? তাও শীতকালে !!
ইয়ারকীর ও একটা সীমা থাকে।তার ওপরে ধুতি পরা। আবার নেড়া ও হতে হবে।ইস, বন্ধুরা কি আওয়াজ দেবে!!! এই চিন্তাতেই বিভোর সে।কিন্তু ভীষণ রাগী বাবা কে সে বলতেও পারছে না যে সে নেড়া হতে চায় না।কখনোই চায় না।
এইসব ভাবতে ভাবতেই গায়ে হলুদ হলো, দু তিন দফা স্নান ও হলো।কিন্তু এখনো বমমা আসছে না কেন? টুটুল সেই ভাগ্যবান দের দলে পড়ে যারা নিজেদের ঠাকুমার মা কেও দেখেছে। ঠাকুমা হলো ঠাম্মা আর ঠাকুমার মা হলো বড়মা, সহজে বমমা। আশি বছরের বমমা এখনো সোজা হয়ে হাটে, দারুন হাতের লেখা,একটাও দাঁত নেই,আর হামানদিস্তায় পান থেঁতো করে খায়। টুটুল কেও মাঝে মাঝে দেয়। কাল রাতেই এসেগেছেন তিনি ,সবাইকে বলেদিয়েছেন যে , ওই জিনিসটা টুটুলকে যেন আর কেউ গিফট না দেয়। কিন্তু ওই জিনিসটা কি টুটুল এখনো জানতে পারেনি। কেউ কেউ সাইকেল দেবে বলেছে। একগাদা লোক সকাল থেকে গল্পের বই, পেন , কিলো কিলো রবীন্দ্রনাথ,শরৎচন্দ্র,সুকুমার রায় দিয়েই যাচ্ছে।
এবার ডাক পড়লো নাপিতের কাছথেকে।টুটুলের চোখে প্রায় জল এসেইগেছে। বাবার দিকে একবার তাকালো।কোনো লাভ নেই ।পালানোর উপায় নেই।সদ্য কেনা ক্ষুর সকালের রোদে ঝকমক করে উঠলো আর একটু একটু করে টুটুলের মাথার চুল আর চোখের জল মাটিতে পড়তে থাকলো। গাড়ি প্রায় আদ্ধেক রাস্তা এসেগেছে, হটাৎ ছোটকাকুর গলার আওয়াজ, "একি, এটা কি হচ্ছে!! , বাবু একবার এদিকে তাকা তো ?" অবাক হয়ে টুটুল তাকাতেই খচাৎ, আদ্ধেক নেড়া মাথার অসহায় টুটুলের ছবি তুলে দাঁত বের করে হাসছে ছোটকাকু। দুনিয়াতে একটাও ভালো লোক আর নেই, স্থির সিদ্ধান্ত নিলো টুটুল। এরপর আরো অনেক নাটকের পর ভিক্ষা পর্ব শুরু হলো।খড়ম পরে থালা হাতে ভবতি ভিক্ষাং দেহি শুরু হলো। হাতের আংটি ,নতুন জামা প্যান্টের পিস এইসব শেষে ,টুটুল দেখলো বমমা আসছে এগিয়ে, টুটুলের বুকটা ধুকপুক করে উঠলো, না জানি কি গিফট দেবে বমমা! ফোকলা মুখে একগাল হেসে একটা ছোট্ট বইয়ের প্যাকেট দিয়ে বললো,"মালকড়ি ভেতরে আছে, রাতে দেখিস যখন বাকি বইগুলো দেখবি"।
রাত্রে সব চুকেবুকে যাওয়ার পর নিজের ঘরে একা একা শুয়ে টুটুল একএক করে সব বইগুলো দেখছে।মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হাত বুলিয়ে নিচ্ছে তার নেড়া মাথা। একটা সাদা রঙের নরম টুপি কে যেন দিয়েছে। সেটাই পরে আছে।কিন্তু বালিশে মাথা রাখলেই মনেহয় যেন ফেভিকল দিয়ে সেটে দিয়েছে কেউ।এই সব দুশ্চিন্তা সরিয়ে বমমার দেওয়া প্যাকেট টা খুললো সে, বেরোলো ছোট একটা লাল বই। মলাটে লেখা ,"শ্রীমদভাগবতগীতা" । মলাট ওল্টাতে ই পাওয়া গেল পাঁচশো একটাকা আর বমমা এর হাতে লেখা কয়েকটি লাইন,
"সুস্থ দেহ,শুদ্ধ মতি, ভোগসুখে নাহি রতি,
হও কর্মে ব্রতী,
মানুষ দেবতা হও, শ্রেয়রে জানিতে চাও,
হও মহামতি।"
--এর একটা শব্দও হয়েওঠা হয়নি টুটুলের। অনেক গুলো বছর চলে গেল বমমার পরে, স্মৃতিটুকু আজও অমলিন।
1 comment:
Osadaron..........
Post a Comment