Saturday, July 8, 2017

ক্যারম

~~"আমি ডান দিকের সিঁড়িটা দিয়ে উঠে যাচ্ছি অনীশ, তুই আমাকে কভার কর,"হিস হিসিয়ে কথাটা বলেই নিঃশব্দে উঠেগেল রোহিত।জার্মান মাউজার এর লক টা আরেকবার দেখেনিল অনীশ।এরকম কভার্ট অপারেশন নতুন নয়,আট বছর হয়েগেলো ফোর্স এ ,তবুও বেসিকস ঠিক  রাখতেই হয়। পাক্কা ইনফরমেশন আছে, কিছু এক্সট্রিমিস্ট এই বিল্ডিং এরই পাঁচ তলায় আছে।আরেক টা ফ্লোর উঠে ডান দিকে ঘুরতেই কপালে জোর একটা আঘাত, তারপর ই সব ব্ল্যাক আউট।

জ্ঞান ফিরতে দেখলো, ওপর থেকে ঝুলিয়ে রাখা আছে তাকে।লোহার রড লাল  করে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে অনীশ এর দিকে, দাতে দাঁত চেপে অনীশ অপেক্ষা করতে থাকলো টর্চারের। মরে যাবে তবু মুখ খুলবে না,এ ট্রেনিং নেওয়া আছে,আজ পরীক্ষার দিন।রোহিত  টা যে কোথায় গেল!!!আবার যখন জ্ঞান ফিরলো,আর্মি হসপিটাল এ শুয়ে আছে অনীশ।খালি কোমরের তলায় সাড় নেই।ডাক্তার বলেগেলেন ,"সরি ফর ইওর লস মাই ব্রেভ সন, ইউ ডিড এ গ্রেট সার্ভিস টু ইওর কান্ট্রি,ইওর ফোর্স"!!! ম্লান হাসি খেলে গেল অনীশ এর মুখে।ওই তো একটা খালি হুইল চেয়ার নিয়ে ঢুকছে রোহিত আর   রিয়া। হৃদপিন্ড টা যেন এক সেকেন্ড এর জন্য থমকে গেল ,তবে কি যা শুনেছিল সবই সত্যি !!! ব্যথার ভান করে চোখ বুজল অনীশ।আর কারুর কোনো কথাই শুনতে ইচ্ছে করছে না।

এক বছর কেটে গেছে।রোহিত এর প্রতিপত্তি, লিডারশিপ এবিলিটি তে সবাই মুগ্ধ।সবচেয়ে বড় কথা , ডিরেক্ট কমব্যাট থেকে ট্রান্সফার হয়ে টেক ডিপার্টমেন্ট এর হেড অনীশ অব্দি তার সাপর্টে, রোহিতের চিফ অফ ডিপার্টমেন্ট হওয়া আটকায় কে? টেক ডিপার্টমেন্ট এর ছোট্ট ঘরটাই অনীশ এর সব।অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াও রয়েছে একটা বিরাট ম্যাচ বোর্ড, ক্যারম এর। ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ন ছিল অনীশ।এখনো ক্যারম এর স্ট্রাইকার তার নিঃসঙ্গতাকে ভরসা দেয়।শুধু রোহিত কে সে টাচ করতে দেয় ওই বোর্ড টা। আজ একটা অপারেশন এর পর ফিরলো রোহিত,শুট এট সাইট এনকাউন্টার অর্ডার ছিল। একটা গুলি ডান হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে।ছুটতে ছুটতে ঢুকে পড়লো, অনীশ এর চেম্বার এ।জামাখুলে ব্যাণ্ডেজ বাঁধতে বসলো।অনীশ চুপ চাপ গুটি সাজাচ্ছিলো বোর্ডে।দেখলো নতুন ট্যাটু করিয়েছেন রোহিত বাবু,ডান কোমরের কাছ থেকে পেট অব্দি সিংহের মুখ।সিক্স প্যাক চেহারায় ভালোই খুলেছে ব্যাপার টা।ম্যাচ শুরু হতেই মুচকি হেসে অনীশ বলল,"একটা পুরোনো সমস্যা সলভ হয়েছে।জেনে গেছি আমাকে সেই টর্চারের পেছনে কে ছিল। মুড ভালো আছে, তোকে আজ সেঞ্চুরি বোর্ড মারবো।বলেই স্ট্রাইক।হিটে ই চার গুটি গেল। লাস্ট গুটি টা ফেলার সময় দেখলো ঠিক অপজিট এঙ্গেলে বোর্ডের ডায়াগোনালি দাঁড়িয়ে রোহিত, মুখ হাঁ করে দেখছে জিনিয়াস অন হুইলস এর খেলা।অনীশ বলল,রোহিত ঐখানেই দাড়া, তোকে চটকা শট দেখাই।বলেই ডান হাতের মধ্যমা আর বুড়ো আঙ্গুল এরমাঝে স্ট্রাইকার বসিয়ে অদ্ভুত ভাবে একটা হিট করলো নিজের বেসে এ।স্ট্রাইকার কোনাকুনি ছিটকে গিয়ে রোহিতের সামনের পকেটে গিয়ে ফেলেদিল শেষগুটি।এক মুহূর্তের জন্য যেন চিনচিনে ব্যাথা পেলো রোহিত, পর মুহূর্তেই সব ঠিক।আস্তে আস্তে খালি বোর্ডের উপরে একটা কার্ড রাখে রোহিত।তার আর রিয়া এর বিয়ে।প্রথম ইনভাইট অনীশ কে।পুরোনো স্মৃতি যেন চলকে ওঠে চোখের সামনে।বেস্ট উইশ জানিয়ে অল্প হাসে অনীশ।পরের দিন সকালেই খবর আসে অফিস এ। নিজের বাথরুমের ভেতর রোহিতের ডেড বডি পাওয়া গেছে। পোস্টমর্টেম এ জানা যায় বিষক্রিয়ায় মৃত্য।তার মোবাইল ট্র্যাক করে দেখাগেল এনকাউন্টার এর পরে  অনেকগুলো বার এ সেই রাতে রোহিত ঢুকেছিলো অফিস ফেরার আগে।নেশা হিসেবে মাঝে মধ্যে ইনজেকশন নিতো রোহিত, বাঁ হাতে ইনজেকশন এর দাগ ও ছিল।গোটা শরীর  জুড়ে ট্যাটু।সেটাই কি কাল হলো??

আরও ছয়মাস কেটে গেল।নতুন চিফ অফ ডিপার্টমেন্ট এর ট্রান্সফার এর জন্য ফেয়ার ওয়েল নিচ্ছে অনীশ।মুম্বাই চলে যাচ্ছে সে।হুইলচেয়ার তার কাজের ক্ষেত্রে উন্নতিতে বাধা হতে পারেনি। সবাই কে ধন্যবাদ জানিয়ে সে বললো যে সে চলে যাওয়ার পর যেন তার বন্ধুর স্মৃতিতে ওই ক্যারম বোর্ডে আর কেউ না খেলে।পাতলা প্লাষ্টিক কভার একটা চাপিয়ে চলে যায় সে।

নতুন বাচ্চা সুমিত  জয়েন করেছে। সে নাকি দারুন ক্যারম খেলে।সবাইতাকে পুরনো গল্প শোনায়। থাকতে না পেরে একদিন   সেই বোর্ডের কভার খুলে সে  আনমনে  হাত বুলোতে থাকে।এত সুন্দর পালিশ করা ম্যাচ বোর্ড।আর কেউ খেলে না এটায়! কি দুর্ভাগ্য! হটাৎ ই একটা পকেটের পাশে হাত দিতেই মনে হয় কেউ যেন  একটা চিমটি কাটলো । সুইচ টা দেখতে পায়নি সুমিত ,যেখানে বলে বলে হিট করতো অনীশ এর স্ট্রাইকার, বিষ মাখানো নিডল টা চোখের পলকে বোর্ড এর সেই পকেটের বাইরের দিক থেকে বেরিয়ে সুমিতের ডান কোমরে ছুঁয়ে আবার ভেতরে ঢুকে যায় ~~~~~