Sunday, April 27, 2014

পৈতে...দা মোস্ট উপকারী সুতো

এই যুগে এই বঙ্গে বামুন হয়ে জন্মে কি কি সুবিধা পেলুম তার একটা হিসেব নিকেশ করছিলাম ,ভোট গরম রোব্বারে চা এর সাথে আনন্দ চেবাতে চেবাতে। দেখলাম অসুবিধেটাই লম্বা লিস্টি হয়ে গেল, তাই সুবিধে খুজতে বসলাম।
পেয়েছি, সহজ, সরল লিস্ট। তার মধ্যে সবচেয়ে সরু জিনিস হল পৈতে।

প্রায় সতেরো বছর আগে আমার পৈতে হয়েছিল,মানে সাধারন মধ্যবিত্ত বামুন বাড়িতে যেভাবে হয় আর কি। শীতকাল, প্রায় ছয়-সাত বার স্নান করতে হয়েছিল, অনেক গিফট পাচ্ছিলাম,বেশ আনন্দ।তার মাঝেই বাজে খবর।নেড়া হতে হবে,তাও আবার একগাদা  লোকের মাঝখানে বসে,সবাই দাঁত ক্যালাবে,নাপিত আমাকে টাকলু বানাবে।অনেক কষ্টে  দাঁত চেপে গিয়ে বসলাম। অদ্ধেক কাটা হয়েছে এমন সময়,হঠাত ঘাড়ের পেছন দিক থেকে ছোটকাকুর গলা,"হ্যাঁ, দাদা ,খুরটা এক সেকেন্ড ধরে রাখুন,হ্যা ,ঠিক ওইভাবে,ব্যাস। খচাক!

সেই ছবি আজও বাড়িতে অ্যালবাম এ রাখা আছে। আজও ঘরোয়া আড্ডায় বসলে সেই প্রসঙ্গ ওঠে। সে দুর্দশার কথা থাক।আরও বড় হয়ে কলেজে পড়তে এসে বুঝলাম পৈতের উপকারিতা।হস্টেলে মশারি খাটিয়ে ঘুমতে হবে?দড়ি নেই? নো চিন্তা। প্রচন্ড গরম, পিঠ চুলকোতে হবে? পৈতে তোমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। নখ চিবিয়ে খেতে তো অনেক কে দেখেছেন,টেনশানে পৈতে চেবানেওয়ালা পাবলিক ও  দেখেছি।এক ফ্রাস্টু দাদার টালমাটাল অবস্থায় পৈতে ঝুলিয়ে সুইসাইডের হাস্যকর চেস্টা আজ ও কলেজের গল্পে লেজেন্ড হয়ে আছে।

ছয় সুতো নাকি নয়, কার ব্যাবহারে কি হয়, কোনদিন বুঝতে পারিনি, ঋগ্বেদ না যজুবেদ, কোনটাই ছুয়ে দেখিনি।গায়ত্রী মন্ত্র এত রিংটোন এ ব্যাবহার হয় যে ভুলতে পারিনি,আর সাবিত্রী মন্ত্র, হাহা ,তার কথা বাদ ই দিন।

বড় মা, মানে আমার ঠাকুমার মা তখনও জীবিত,পৈতে তে "গীতা" এক মাত্র তিনি ই  উপহার দিয়েছিলেন,হুকুম ছিল আর কেউ যেন না দেয়। নগদ এক হাজার টাকা ছাড়াও কয়েকটা লাইন লেখা ছিল যা কোনদিন জীবনে ব্যাবহার করিনি, কিন্তু মাথায় কোনও একটা কোণে ফেলে রেখে দিয়েছি,
" সুস্থ দেহ সুদ্ধ মতি, ভোগ সুখে নাহি রতি্‌, সদা ধর্মে মতি ,
 মানুষ দেবতা হও,শ্রেয়রে জানিতে চাও, হও মহামতি"।
 
আজও  হোলিতে রঙ খেলার পর পৈতে পাল্টানর সময় মাঝে মাঝে এইসব কথা মনে পড়ে যায়।