আমি বল্টে, বয়স চোদ্দ, রোগাটে গড়ন, গায়ের রং কালো, আর বয়সের তুলনায় একটু লম্বা আর একটু পাকা, বরেন কাকু বলে। রঘুনাথপুরের স্টেশনের ঠিক পেছনে বুড়ো বট তলার পূর্ব পাশেই বরেন কাকুর দো তলা মাটির বাড়ি। জন্ম থেকে সেখানেই আছি। বরেন কাকুর তিনকুলে কেউ এখন আর নেই, আমারও কেউ ছিল কিনা জানি না। বছর কুড়ি আগেই একটা এক্সিডেন্ট এ বরেন কাকুর বউ,বাচ্চা,বাবা আর মা মারা যান। বরাতজোরে টিকে গেছিলো বরেন কাকু।আর বিয়ে করেনি।বাড়িটাকে একটা অনাথ আশ্রম বানিয়ে দিয়েছে।আমি ই এক নম্বর এই বাড়িতে।আরো আটজন আছে। বরেন কাকু আমাকে স্টেশনের ধারে রাখা একটা ভাঙা ওয়াগোনের ভেতরে পেয়েছিল গামছা জড়ানো অবস্থায়।চারপাশে অনেক জং ধরা নাট বল্টু পড়ে ছিল।সেই থেকে আমি বল্টে ।
এক নম্বর তাই একটু বেশি ভালোবাসে।কি যেন বলল,হ্যাঁ, আমাকে দত্তক নিয়েছে, নাম দিয়েছে অজয়, আমার আধার কার্ড ও আছে। ক্লাস এইটে পড়ি আমি।পরশুদিন ক্লাসে ব্যাটারী নিয়ে এসেছিলেন ভৌতবিজ্ঞানের স্যার। বেশ মজার জিনিস শেখালেন।কাল স্কুল ছুটি, কাল তো রথ।এই রথের দিনগুলো বেশ মজা হয়, বরেন কাকু রথ এনে দেয় একটা ছোট্ট, আমরা সবাই মিলে সেটাকে সাজাই। রথ সাজানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।রঙ্গিন কাগজ,সেলোটেপ, আঠা,কাঁচি আরো কত কি লাগে।
আমাদের পাড়ায় প্রতি বছর রথের মেলা হয়, রথ কম্পিটিশান হয়, একবার ও ফার্স্ট হতে পারিনি।এবারে ও চেষ্টা করতে হবে।শোলা কেটে নকশা ভালোই পারি, কিন্তু আলো নিয়েই মুশকিল,মোমবাতি ই ভরসা। কিন্তু এবারে ঠিক করেছি ব্যাটারী আলো করবো।এভারেডি ব্যাটারী এনেছি বড় গুলো,তিন টে।একটার পর একটা পরপর লাগিয়ে ভালোকরে খবরের কাগজে এগ রোলের মতো পাকিয়ে নিয়েছি।এবার টুনি কিনে হোল্ডারে জুড়ে দিলেই হলো।লাল তার একদিকে আর অন্য দিকে কালো তার , আর পুরোটাকে আটকে রাখার জন্য গার্ডার। ব্যাস ,হয়েগেলো আলো।এইবারে প্রসাদ টাও ভালো করে করতে হবে, চানা, বাতাসা, কলা,শসা তো থাকবেই,ভাবছি নকুলদানাও দেবো।অনেক কষ্টে বরেন কাকুকে রাজি করিয়েছি।আসলে ধান্দা অন্য।আমি দেখেছি যে রথের মেলায় লোকে চারাগাছ ছাড়া আর কিছু কেনে না,ভালো রথের দিকে তাকিয়ে প্রশংসা করে বটে কিন্তু প্রণামী দেয় না, কিন্তু প্রসাদ পেলে কিছু না কিছু দেবেই। সেই টাকা জমিয়ে পরের দিন ফিস্ট করব।সেটাই মজা। সব্বাইকে আমার প্ল্যান বলে দিয়েছি।সবাই রাজি। বরেন কাকু কে বলিনি,খুব মারবে তাহলে।
টাকা ভালোই উঠছে, জগন্নাথ,বলরাম,সুভদ্রার কৃপায়।এমন সময় হঠাৎ ভীষণ ঝড় উঠলো,তারসাথে বৃষ্টি। সব যেন লণ্ডভণ্ড করেদেবে।সবাই পালাতে ব্যস্ত। একটাই মাত্র লোক তখন আমাদের রথের সামনে দাঁড়িয়ে,গম্ভীর মুখে আমাদের নাম কি,কোথায় থাকি জিগ্যেস করছে আর টকা টক প্রসাদ খেয়ে যাচ্ছে,প্রণামী দেওয়ার নাম ই নেই।আমরা তখন পালাতে পারলে বাঁচি।দুহাতে রথ টা জড়িয়ে দৌড় দিলাম আমি ।বাকিদের কেউ সামলাচ্ছে প্রণামী এর বাটি, কেউ প্রসাদের থালা। প্রচন্ড বৃষ্টি আর কড়কড় করে বাজ পড়ছে। সবাই আলাদা হয়েগেছি। রাত অনেক,ভয় ও করছে।অনেক দেরিতে যখন বাড়ি পৌঁছলাম,দেখি বরেন কাকু হ্যারিকেন হাতে বাইরের ঘরে পায়চারি করছে।আমাকে দেখে ,কান টা খুব জোরে পাকিয়ে দিয়ে বললো,"পালের গোদা হয়েছ? এক চড়ে পিঠ ফাটিয়ে দেব তোর, এতগুলো বাচ্চা কে নিয়েগেছিস,কোনো আক্কেল আছে?" কোনোমতে চোখের জল সামলে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লাম।প্রসাদের থালা, প্রণামী এর বাটি,সব হারিয়ে গেছে,রথ টা এক কোণে রেখে প্রনাম করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে রোদ উঠেছে,আমাদের মন ও আকাশের মতো ঝকঝকে হয়ে উঠেছে।পান্তা,আলুমাখা আর কাঁচালঙ্কা খেতে খেতে বললাম,"জানো বরেন কাকু,আমাদের ফিস্ট ও গেলো, প্রণামী এর বাটিও গেলো, প্রসাদের থালা ও হারালো।তার ওপর একটা লোক কালকে প্রচুর কথা জিগ্যেস করলো,আমার নাম,তোমার নাম,ঠিকানা ,আরো কত কি ,প্রসাদ ও খেলো কিন্তু কি ছোটলোক ভাবো, প্রণামী দিলো না!!!"
বরেন কাকু আস্তে করে উঠে গিয়ে একটা সাদা খাম এনে সবার সামনে ফেলে বললো,
"তোরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই সে এসে প্রণামী দিয়েগেছেরে, এক হাজার এক টাকা,তোদের প্রথম পুরস্কার।"
এক নম্বর তাই একটু বেশি ভালোবাসে।কি যেন বলল,হ্যাঁ, আমাকে দত্তক নিয়েছে, নাম দিয়েছে অজয়, আমার আধার কার্ড ও আছে। ক্লাস এইটে পড়ি আমি।পরশুদিন ক্লাসে ব্যাটারী নিয়ে এসেছিলেন ভৌতবিজ্ঞানের স্যার। বেশ মজার জিনিস শেখালেন।কাল স্কুল ছুটি, কাল তো রথ।এই রথের দিনগুলো বেশ মজা হয়, বরেন কাকু রথ এনে দেয় একটা ছোট্ট, আমরা সবাই মিলে সেটাকে সাজাই। রথ সাজানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।রঙ্গিন কাগজ,সেলোটেপ, আঠা,কাঁচি আরো কত কি লাগে।
আমাদের পাড়ায় প্রতি বছর রথের মেলা হয়, রথ কম্পিটিশান হয়, একবার ও ফার্স্ট হতে পারিনি।এবারে ও চেষ্টা করতে হবে।শোলা কেটে নকশা ভালোই পারি, কিন্তু আলো নিয়েই মুশকিল,মোমবাতি ই ভরসা। কিন্তু এবারে ঠিক করেছি ব্যাটারী আলো করবো।এভারেডি ব্যাটারী এনেছি বড় গুলো,তিন টে।একটার পর একটা পরপর লাগিয়ে ভালোকরে খবরের কাগজে এগ রোলের মতো পাকিয়ে নিয়েছি।এবার টুনি কিনে হোল্ডারে জুড়ে দিলেই হলো।লাল তার একদিকে আর অন্য দিকে কালো তার , আর পুরোটাকে আটকে রাখার জন্য গার্ডার। ব্যাস ,হয়েগেলো আলো।এইবারে প্রসাদ টাও ভালো করে করতে হবে, চানা, বাতাসা, কলা,শসা তো থাকবেই,ভাবছি নকুলদানাও দেবো।অনেক কষ্টে বরেন কাকুকে রাজি করিয়েছি।আসলে ধান্দা অন্য।আমি দেখেছি যে রথের মেলায় লোকে চারাগাছ ছাড়া আর কিছু কেনে না,ভালো রথের দিকে তাকিয়ে প্রশংসা করে বটে কিন্তু প্রণামী দেয় না, কিন্তু প্রসাদ পেলে কিছু না কিছু দেবেই। সেই টাকা জমিয়ে পরের দিন ফিস্ট করব।সেটাই মজা। সব্বাইকে আমার প্ল্যান বলে দিয়েছি।সবাই রাজি। বরেন কাকু কে বলিনি,খুব মারবে তাহলে।
টাকা ভালোই উঠছে, জগন্নাথ,বলরাম,সুভদ্রার কৃপায়।এমন সময় হঠাৎ ভীষণ ঝড় উঠলো,তারসাথে বৃষ্টি। সব যেন লণ্ডভণ্ড করেদেবে।সবাই পালাতে ব্যস্ত। একটাই মাত্র লোক তখন আমাদের রথের সামনে দাঁড়িয়ে,গম্ভীর মুখে আমাদের নাম কি,কোথায় থাকি জিগ্যেস করছে আর টকা টক প্রসাদ খেয়ে যাচ্ছে,প্রণামী দেওয়ার নাম ই নেই।আমরা তখন পালাতে পারলে বাঁচি।দুহাতে রথ টা জড়িয়ে দৌড় দিলাম আমি ।বাকিদের কেউ সামলাচ্ছে প্রণামী এর বাটি, কেউ প্রসাদের থালা। প্রচন্ড বৃষ্টি আর কড়কড় করে বাজ পড়ছে। সবাই আলাদা হয়েগেছি। রাত অনেক,ভয় ও করছে।অনেক দেরিতে যখন বাড়ি পৌঁছলাম,দেখি বরেন কাকু হ্যারিকেন হাতে বাইরের ঘরে পায়চারি করছে।আমাকে দেখে ,কান টা খুব জোরে পাকিয়ে দিয়ে বললো,"পালের গোদা হয়েছ? এক চড়ে পিঠ ফাটিয়ে দেব তোর, এতগুলো বাচ্চা কে নিয়েগেছিস,কোনো আক্কেল আছে?" কোনোমতে চোখের জল সামলে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লাম।প্রসাদের থালা, প্রণামী এর বাটি,সব হারিয়ে গেছে,রথ টা এক কোণে রেখে প্রনাম করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে রোদ উঠেছে,আমাদের মন ও আকাশের মতো ঝকঝকে হয়ে উঠেছে।পান্তা,আলুমাখা আর কাঁচালঙ্কা খেতে খেতে বললাম,"জানো বরেন কাকু,আমাদের ফিস্ট ও গেলো, প্রণামী এর বাটিও গেলো, প্রসাদের থালা ও হারালো।তার ওপর একটা লোক কালকে প্রচুর কথা জিগ্যেস করলো,আমার নাম,তোমার নাম,ঠিকানা ,আরো কত কি ,প্রসাদ ও খেলো কিন্তু কি ছোটলোক ভাবো, প্রণামী দিলো না!!!"
বরেন কাকু আস্তে করে উঠে গিয়ে একটা সাদা খাম এনে সবার সামনে ফেলে বললো,
"তোরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই সে এসে প্রণামী দিয়েগেছেরে, এক হাজার এক টাকা,তোদের প্রথম পুরস্কার।"
No comments:
Post a Comment