Monday, May 1, 2017

সেই আড্ডার রেশ ধরে ...



ন্যাপলা হঠাত ডান হাতের তর্জনী ওপরের দিকে করে বলে উঠল ," স্যার ,অনেকেই অনেক কিছু বলছেন,আমিও কিছু
প্রশ্ন করব স্যার ? মানে খুব কিউরিয়সিটি হচ্ছে ।
--হু ।
--বলছিলাম কি ,ফেলুদা বিয়ে করলেন না কেন ?
চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে বিষম খেলেন লালমোহন বাবু,মগনলালের সুগন্ধী পানমশালা,হাতের চামচ থেকে মুখের বদলে নাকের দরজায় আঘাত করে ছড়িয়ে পড়ল, কিন্তু হাঁ বন্ধ হল না ! ছোকরা বলে কি !
--"আর কিছু ?",গম্ভীর কন্ঠে স্নিগ্ধ প্রশয়ের ছোঁয়া ...
--না মানে ,জানার তো অনেক কিছুই ছিল।যদি অভয় দেন তো বলি,খুড়ো যে ভাবে আমার কনুই তে রামচিমটি দিচ্ছেন,বেশীক্ষণ বাঁচার গ্যারান্টি নেই ।
--বলো,বলো ,আজ তো তোমাদের কথা শুনব বলেই এসেছি
-- আচ্ছা স্যার , এ বাংলায়  রিসেন্টলি একটাও পপুলার বেস্টসেলার রাইটার এল না কেন লালমোহন বাবুর পরে? দেশ জুড়ে জনতা অচেতন, নিরামিষ পড়ে ফাটিয়ে দিল, অবশ্য স্যার আপনার কিছুই অজানা নয়।আজকাল শুনছি,লেখকেরা নাকি কোন রঙ এর কালিতে লিখবেন সেটা নিয়েও তিনমাস ভাবে, কি লিখবে সেটা ভাবার আগে।
--মুচকি হেসে তিনি বললেন ,"বেশ ,বাকিদের কথাও একটু শুনি, তুমি কি একটা নন-কমারশিয়াল ব্রেক নেবে ন্যাপলা?"
সিধুজ্যাঠা বলে উঠলেন এবার,"আমার বক্তব্য একটু অন্য দিকে। আপনি না হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য পাননি।কিন্তু এখন তো অবস্থা সেরকম নয়, তাহলে আজ ও কেন শঙ্কুর কান্ড কারখানা নিয়ে একটাও সিনেমা বেরোল না? বাংলায় যদি নাও হয় , অন্য ভাষায় , ইংরাজিতে হতেই পারত । এত রিচ কন্টেন্ট ,এত দারুন রোমহর্ষক টান টান গল্প !! এ থেকে যদি সিনেমাপ্রেমীরা বঞ্চিত হয় তা তো হতাশার ,তাই না ?"   এবার নকুড় বাবুর পালা ।হাত কচলে বলে উঠলেন ,""স্যার, তিলুবাবুর লাইব্রেরী থেকে মাঝে মাঝে ধার নিয়ে আপনার প্রায় সব গল্পই আমার পড়া। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব স্যার ? খগম না রতন বাবু না বঙ্কুবাবু না আপনার অনন্য অনুবাদ গুলো !! এই যে ধারা টা আপনি তৈরি করে দিয়ে গেলেন,সেটা আর কেউ ধরতেই পারল না।অবশ্য সেই জন্যই আপনি আপনার জায়গায় ।কিন্তু লেখা নিয়ে চিন্তা নিয়ে ভাবনা  নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের খুব অভাব দেখি । আবেগে ভেসে একটু বেশী বলে ফেললাম।অপরাধ নেবেন না স্যার ।মগনলাল আরামসে আড্ডা শুনছিলেন , হঠাত বলে উঠলেন,"আমার যেটা মনে হয় স্যার, গাড়ি কেন আর এগোল না, তার পিছনে একটাই কারন, দুনিয়াকা সবসে বড়া রোগ, কি কেয়া কহেঙ্গে লোগ , কি আঙ্কেল ঠিক বলেছি?"
ডান পা টা নামিয়ে  ,তার উপর বাঁ পা টা আলতো করে রেখে ধীরে ধীরে বলে উঠলেন স্রষ্টা ,"আপনাদের প্রায় প্রত্যেকের কথাই যুক্তিপূর্ণ   ,সে বিষয়ে সন্দেহ নেই  । কিন্তু আমার পরিস্থিতি অন্য ছিল ।অনেক সিদ্ধান্ত , অনেক যতি চিহ্ন আমায় অনেক ক্ষেত্রে নিতে হয়েছে যার পেছনে বহু অকথিত কাহিনী আছে যেগুলো আজ আমি জানানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা । আর আজকাল যা ঘটছে তার উপর তো আমার কোনও নিয়ন্ত্রনও নেই ,তাই না সিধুজ্যাঠা ? চিন্তনের ফারাক এসেগেছে, সময় ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে ।বদলেছে অনেক সমীকরণ।নিয়মিত খুঁটিয়ে কাগজ পড়া আমার দৈনিক অভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল ।আজ তা আমায় কিঞ্চিত ব্যাথা দেয় ।বোধহয় সময় এসেছে বোঝার যে আমরা কি খাচ্ছি আর আমাদের কি খাওয়ানো হচ্ছে তার পার্থক্য । তোমরা প্রত্যেকে আমার ভীষণ প্রিয় , হয়ত খুব খুঁটিয়ে দেখলে তোমাদের অনেকেই হচ্ছ ভিন্ন ভিন্ন সময়ের,পরিস্থিতির ভিন্ন ভিন্ন আমি। তোমরা নিজেরাই বুঝে নাও, কেন কখন আমি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছি বা নিতে বাধ্য হয়েছি ।কারন তোমরাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছ ।  আজ ও ।" নিজেকে চেয়ার একটু এলিয়ে দিয়ে অল্প  হাসেন স্রষ্টা । সৃষ্টি দেরও চোখে জল ।এবারের মত বিদায় আসন্ন । ্সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে একে একে হাত মেলাতে গেলেন আর মিলিয়ে গেলেন তাঁর সাথে। সবাই ,শুধু ফেলুদা বাদে ।

মুখোমুখি দুজনে।  চোখে চোখ রেখে , সামনে দাবার বোর্ড টা পাতা । বোড়ে একঘর এগিয়ে বলে উঠলেন তিনি ,"সব ই তো শুনলে , তুমি কিছু আমাকে বলবে না ?" সেই চিরাচরিত একপেশে হাসিটা হেসে ফেলুদা বলল,"নিজেকে নিজেই কিছু জানাতে হলে সেতো নীরবেই জানানো যায় , তাই না ?..."  আপনার চাল ...





No comments: