Saturday, September 16, 2017

খুনসুটি

সারাদিন খাটা খাটুনির পর অফিস থেকে ফিরে একটু হাত পা ছড়িয়ে ফ্যান এর তলায় বসলো অসিত। লাস্ট দু সপ্তাহ খুব হেক্টিক গেছে। প্রমোশন তারপর বদলি, নতুন শহর, আবার একটা ঠিক ঠাক বাড়ী ভাড়ার জন্য খোঁজা, এক ঘর জিনিস পত্র সরানো, খুব ধকল যাচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতে রেগুলেটর টা একটু বাড়াতে গেল অসিত, আর ব্যাস, লোডশেডিং।
---ধুর শালা, কপাল টাই খারাপ।
--" তাই হবে, তুমি আজও ইনভার্টার এর কানেকশন টা ঠিক করলে না, "...টর্চ নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো শ্রাবণী।
-- সারাদিন কাজের পর আর কিচকিচ করো না তো, আমারো তো একটা সীমা আছে নাকি, কতোদিক কত তাড়াতাড়ি সামলাবো ??
-- তুমি একাই সব সামলাও ?? সারাদিন ধরে আমি ঘরে থাকি বলে কি কিছুই করিনা বলতে চাও?একটা ছুটির দিন শুধু তোমার ছেলেটা কে ,এক বেলা সামলে দেখাও , বাকি ঘরের কাজ বাদ ই দিলাম ,তারপর মেজাজ দেখাবে।
দুঃস্বপ্নেও জেতা যাবে না, এরকম যুদ্ধে না নামাই ভালো। ডিসকভারি তে মাঝে মাঝেই দেখায় স্বয়ং বিশালাকায় সিংহ মামাও সিংহী র দাবড়ানি এর সামনে ল্যাজ গুটিয়ে বসে পড়ে, তো অসিত কোন ছারপোকা !!!
পাশের রুমে ছোটা শাকিল ততক্ষনে দুষ্টুমি ভুলে অন্ধকারে চিল চিৎকার জুড়েছে। প্রায়োরিটি সেট করা হয়ে গেল। শাউটিং কিড না ক্ষুব্ধ বউ । প্রথম টাই শান্ত করা জরুরি। চুপচাপ বাচ্চা কে কোলে করে ছোট্ট ব্যালকনিতে চলে যায় অসিত। আর দিন দুয়েক বাদেই পূর্ণিমা।অনেক টা চাঁদের আলো এসে পড়েছে বারান্দায়। বউ চুপচাপ ব্যালকনির আরেক কোনে দাঁড়িয়ে। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অসিত হঠাৎ বলে উঠলো,
--- আমার চশমা কোন ক্লাসে লেগেছিল জানো??
-- না, তাতে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে?
-- তাও ঠিক। আচ্ছা, বাদ দাও।
‌খুব ই পুরোনো ট্রিক।কিন্তু দরকারে খুব কাজে দেয়।কিউরিওসিটির সলতে পাকিয়ে ছেড়ে  দাও।
--কি হলো, বলবে??
--- কি বলবো?
-- ন্যাকামো তুমিও কম করো না। তোমার চশমার গল্প।
-- ওহ, ওই টা কিছুনা।
-- তুমি বলবে,  হ্যাঁ কি না ?
--বলছি বলছি, আমার চশমা লেগেছিল ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে ওঠার সময়।লোডশেডিং এর জন্য।
-- মানে?
-- মানে আর কি? তখন তো আর ব্যাটারী, ইনভার্টার ছিল না, মানে আমার বাবা তখন ও এনে দিতে পারে নি। তো হারিকেন ই ভরসা।
-- তার সঙ্গে চশমার কি ??
-- কিছুই না, হোম টাস্ক ক্যান ওয়েট, চাচা চৌধুরী, বিল্লু, পিঙ্কি, সাবু , রাকা কান্ট। যত খুদে খুদে লেখাই হোক, যত কম আলোই হোক, পড়ে ফেলতেই হবে। আমাদের বাবু বোধহয় এই সব আর পড়বে না বলো,   বড়ো হয়ে??
-- কে জানে!!মোবাইল, কিন্ডল, ট্যাব কত কি এসেগেছে,বই হাতে নিয়ে পড়ার কি দরকার!! আমার চাঁদমামার একটা বিশাল কালেকশন ছিল জানো, পুজোতে বাপের বাড়ি গেলে পুরোনো আলমারি গুলো ঝেড়ে দেখতে হবে।
-- বা বা, তুমি এতদিন বলোনি তো?
--তুমিও কি বলেছিলে যে কমিকস পড়ে পড়ে তোমার চোখে চশমা লেগেছিল??
-- শোধবোধ, ওকে? তুমি হারিকেন এর কাচ পরিস্কার করে কেরোসিন ভরে ঠিক ঠাক জ্বালাতে পারবে? আমি পারতাম । কেরোসিনের একটা অদ্ভুত দারুন গন্ধ হয় , যেটা ছোট বেলায় কেন জানিনা খুব ভালো লাগতো। আমি মেঝেতে বসে হারিকেন ঠিক ঠাক ফিটিং করতাম, আর আর ঠাম্মা পান চিবোতে চিবোতে মাঝে মাঝে সেই সময় ই ভূতের গল্প বলতো। আজকাল আর কেউ গল্প বলে না বলো, সবাই গল্প ফরওয়ার্ড করে।
-- তাই হবে, এই সব বাজে কথা ছেড়ে উঠবে, বাচ্চা টা ঘুমিয়ে গেল যে!!
-- হ্যাঁ, এনাকে ন্যাপি পরিয়ে যথাস্থানে সেট করে দিতে হবে  দেখছি, একটু ধরো দেখি। এই দেখ,
 কারেন্ট ও এসেগেল। যাক বাবা , শান্তি ।
-- হ্যাঁ, তোমার ওই সব ভাট বকা থেকেও শান্তি দাও। তাড়াতাড়ি ডিনার টা সেরে আমাকে উদ্ধার করো।
-- তুমি না খুব আনরোমান্টিক, বুঝলে?
-- তুমিও না খুব  প্যাথেটিক  , কাল যেন ইনভার্টার টা লোক এসে সারিয়ে দিয়ে যায়, বুঝলে??



No comments: