Saturday, April 22, 2017

তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ ...



গলা একটু  খাঁকরিয়ে ধীরে ধীরে রজনী সেন রোডের বাড়ীটার বৈঠকখানায় ঢুকলেন নকুড়বাবু , পরিচিত কুন্ঠাবোধ  সদা বিরাজমান। ঢুকেই বিস্ময়াবিষ্ট চোখে প্রশ্ন,"সে কি , তিলু বাবু এখনও এসে পৌঁছাননি !!" পঁচিশ বছরে পাংচুয়ালিটি তে কি ধার কমে গেল ??   ... সেই চেনা গলায় বৈঠকখানার আরেক কোণ থেকে বলে উঠলেন মগনলাল মেঘরাজ,"আরে আইয়ে আইয়ে , বৈঁঠিয়ে তো সহি ।  ছিনাথ , যাও থোড়া  নাস্তা পানি কা বন্দবস্ত তো করো । মিস্টার মিত্তির তো মেহমাননওয়াজির জিম্মা আমাকেই দিয়ে বললেন এক ঘোন্টার মধ্যে আসছি। বুঢঢা হলে দেখছি বহুত জ্বালা , ইদিকে আঙ্কেল এখনও আসেনি।"

তপসে টা  একই ভাবে খালি অবজারভ করে যাচ্ছে।  ভাবছে এতগুলো বছরেও ক্যারেক্টার গুলোর কোনও পরিবর্তন 
হলনা ।লোকটার এলেম ছিল সত্যি।  ঐ তো সবুজ আম্বাসাডর টা রজনীসেন রোডে ঢুকছে ।মার্কেট থেকে উঠে গেলেও
কালমোহন বেঙ্গলি আজও ধরে রেখেছেন ।  যদিও বিকট হর্ন টা নেই। তার বদলে গাড়ী ব্যাক করতে গেলে গুগাবাবার সিগনেচার টিউন টা, ঐ যে ভদ্রলোক বানিয়েছিলেন , সেটাই বাজে । কালজয়ী প্রতিভা , সব কালেই আভা ছড়ায় । লালমোহন বাবু তো ঘরে ঢুকেই মগনলালের হাত থেকে ডালমুটের প্লেট টা ছিনিয়ে নিলেন,আর আড়চোখে তোপসে কে দেখে বললেন,"এটা   আমার ..."  

ন্যাপলা এখন অনেক বড় হয়েগেছে ।তবু খুড়োর সামনে লজ্জা পায় । এই বয়সেও খুড়ো সটান গটগট করে হেটে চলে।তবে আজ খুড়োর মুড ভাল । এক্সপোর্ট কোয়ালিটির বিড়ি ধরিয়ে বৈঠকখানায় এন্ট্রি নিতে নিতে বলল," চল, আজ তোকে একটা লোকের সাথে আলাপ করিয়ে দেব , চমকে যাবি " ।

"তোমার নিউটন কে আমার ভারি পছন্দ ,বুঝলে শঙ্কু , অনেক গুলো দিন কেটে গেল । আজকাল আর পেপার কাটিং দেখতে হয়না ।মোবাইল ই কাফি । ফেলুটাও চট করে দেখা করে না। দরকার হলেই ফেসটাইম করে নেয় ।বলল তোমাকে রিসিভ করে ওর বাড়ীতে নিয়ে আসতে । কিছু বলেছে তোমায় , কি ব্যাপার ? "।চশমা মুছতে মুছতে প্রফেসর জবাব দিলেন,"কিচ্ছু ভাববেন না সিধুজ্যাঠা, আজ একজনের সাথে আলাপ হবে । আনন্দ পাবেন ।"

তোপসেও হাত লাগিয়েছে ।অন্য দিকে ফেলুদা ।ধীরে ধীরে চকলেট ব্রাউন রঙ এর সেই বিখ্যাত চেয়ার টা তাদের 
 বৈঠকখানার ঠিক মাঝখানে উপস্থিত করল ফেলুদা। সবাই অবাক ।একি , খালি চেয়ার মাঝখানে রেখে প্লানচেট হবে নাকি ? উপস্থিত সবার দিকে একবার দেখে নিয়ে সেই একপেশে হাসিটা হেসে ফেলু দা বলল ,"আজকে গল্পটা জমবে, বুঝলি তপসে ,তিনি আসছেন ।"

ধীর পায়ে দীর্ঘদেহী এক রাশভারী গর্বিত বাঙালী , পাইপ টা  ঠোটের বাঁদিকে  ঝুলিয়ে ,ডান পা টা বাঁ পায়ের উপর 
রেখে চেয়ারটি দখল করলেন ।  বৈঠকখানায় তখন একটা   পিন  পরলেও যেন শব্দ হবে  । স্বভাব গাম্ভীর্য একটু 
সরিয়ে মুচকি হেসে স্রষ্টা বলে উঠলেন ব্যারিটোনে ," তাহলে , আড্ডা শুরু হোক " ।