Sunday, May 14, 2017

ফোটোডিয়া


বিমলের চিরকালই শখ ছিল যে একটা ষ্টুডিও বানাবে, ঠিক বাস স্ট্যান্ডের গায়ে। তার এই আধা শহর ফুল মফঃস্বল টাউনে ষ্টুডিও তো অনেক আছে,কিন্তু লেটেষ্ট কেতা ওয়ালা, বাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলোকে ফেসবুকের দেওয়ালে ছাপানোর মত আইডিয়া দেবে এরকম বান্দা বেশি নেই।সেই থেকে শুরু হলো "ফোটোডিয়া" ।একশো স্কয়ার ফিটের একটা গ্রাউন্ড ফ্লোর রুম ভাড়া নিয়ে।

হাসিমুখ,সর্বদাই খই ফুটছে এরকম এনার্জি নিয়ে সে কাজ শুরু করে দিলো।ব্যবসা জমে উঠতে দেরী হলো না।মাস আষ্টেক যেতে না যেতেই বিমলের মনে হলো একটা শাগরেদ খুব দরকার। দু-তিন টে অন্নপ্রাশন এর কাজ চারটে বিয়ে বাড়ীর ডাক এনে দিয়েছে।সে ভেবে দেখলো যে ক্যাবলা গোছের লোক হলেই চলে যাবে। ক্যামেরার কাজ সে একা ই ম্যানেজ করে দেবে,দরকার শুধু ব্যাগ-ট্রাইপড-লাইটস-কেবল এই সব বওয়ার জন্য একটা ছোকরা।

স্টুডিওর উল্টো দিকেই কেষ্টদার চায়ের দোকান।মাস দুয়েক হলো,একটা নতুন হেল্পার জুটেছে কেষ্টদার।অসীম ছেলেটা ভীষণ ই চুপচাপ।শান্ত মুখে হালকা হাসি লেগেই আছে।নিঃশব্দে কাজ করে যায়।কিছুতেই বলেনা  ,কোথা থেকে এসেছে,কি তার সমস্যা।কেষ্ট দা একদিন রাতে দোকান বন্ধ করার সময় দেখে যে একটা ছেলে সামনের বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছে। বাস স্ট্যান্ডে কত ভবঘুরে ই তো ওইরকম বসে থাকে।নির্বিকার চিত্তে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যায় কেষ্ট দা।সকালে এসে দেখে একই জায়গায় ঠায় বসে আছে।কেষ্ট দার অভিজ্ঞ চোখ কিন্তু দয়ার শরীর, রেখে দিলো তাকে কাজে।বিমল চাইতে গাই গুই করেনি।শুধু বলে দিয়েছে,"খেয়াল রাখিস আর পারলে জানার চেষ্টা করিস ওর মতলব !!"

খেয়াল অবশ্যই রেখেছে বিমল। যত্ন করে কাজ শিখিয়েছে অসীম কে। দিন দিন পোক্ত হচ্ছে তার হাত। নিখুঁত থেকে নিখুঁততর হচ্ছে তার কাজ।ব্যবসা ও বাড়ছে ।  সারাদিনের হাসিমুখ থেকে হাসি শুধু মুছে যায় রাত  হলে । বিমলের এক   চিলতে ঘরের  বারান্দা তেই  শুয়ে পড়ে অসীম । চিন্তামগ্ন সে দেখে বোঝাযায় , চিন্তার তল পাওয়া যায় না। নিঃশব্দে কাজ করে চলে সে , দিনের পর দিন , বিনা বাক্যব্যয়ে ।

দেখতে দেখতে ডিসেম্বর ঢুকে গেল ।    বিয়ে  বাড়ির কাজ ,সময়ের সাথে সাথে নতুন নাটকের আবির্ভাব ঘটেছে ।বাঙালীর বিয়েতে সংগীত হচ্ছে,মেহেন্দি হচ্ছে ,বেনারসী জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে লেহেঙ্গা -চোলি কে প্রায় হামেশাই।আর একদম লেটেষ্ট আমদানি হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের ফোটোশুট । রকমারি নাম তার, ঝিনচ্যাক কাম ।বিয়ের দু-হপ্তা আগে বর  বৌ হরেক পোজে ফটো তুলবে।গড়ের ময়দানে তুললেও ব্যাকগ্রাউন্ডে  নায়াগ্রা ফলস জুড়তে হবে । লাইক বড়  বালাই ।জীবন ভীষণ রকমই ডিজিট্যাল |এরপর যাচ্ছে ওয়েডিং শুট , পোস্ট ওয়েডিং বিদাই  শুট , ইত্যাদি ।

হানিমুন শুট নিয়েও অনেক নাটক শুনেছে বিমল।তবে তার ব্যক্তিগত কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি ।এইসব নাটকে প্রাথমিক অসুবিধে হলেও ধীরে ধীরে সে বুঝে নিয়েছে যে টিকে থাকতে গেলে উপায় নেই.। অসীম সবই বোঝে কিন্তু কেন জানিনা না বিয়েবাড়ির ছবি তুলতে একদম ই চায় না ।কিন্তু মালিক কে ঘাঁটাতেও  চায় না সে ।

সিজনের  এর শেষ বিয়ে বাড়ি ।বায়নার অ্যাডভান্স এর সাথে বিয়ের কার্ড টা ও দিয়ে গেছে মেয়ের বাড়ির লোক ।রিনা ওয়েডস অর্জুন | এক ঝলকে কার্ডে চোখ বুলিয়ে নিয়েই সরে যায় অসীম ।অভ্যস্ত হাতে  গুছোতে থাকে ব্যাগ । বিমল লক্ষ্য করতে থাকে, একটু যেন দ্রুতই ব্যাগ গুছিয়ে নিলো অসীম।এই কাজের পর দিন পনেরো ছুটি নেবে বিমল।অসীম কেও বলেছে বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে । নিঃশব্দে হেসেছে অসীম । হঠাৎ একটা টুপি হাত বাড়িয়ে চেয়ে নিলো বিমলের কাছ থেকে । অসীমকে আগে কখনো টুপি   পড়তে দেখেনি বিমল ।  বেশ অন্যরকম দেখাচ্ছে তাকে।  প্রায় চেনাই যায় না ।

প্রবল ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটেগেলো সারাটা দিন ।এতো লোক,এতো দাবী ,এতো ভিন্ন পোজের মুখ ভ্যাংচানোর ছবি তুলতে হয়েছে যে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় ।অসীমের মুখে চোখে ক্লান্তির কোনো চিহ্ন নেই ।তেল খাওয়া মেশিনের মতো কাজ করে পড়েছে ।অবশেষে খ্যাওয়ার ডাক পড়লো ।খেতে বসতেই যাবে , হঠাৎ ইঙ্গিতে স্টুডিওর চাবিটা চাইলো অসীম ।কে জানে কি ফেলে এসেছে !একটু অবাক হলেও বিমল বিনা প্রশ্নে দিয়ে দিলো চাবি টা ।

কনে বিদায়ের সময় উপস্থিত ।হতচ্ছাড়া অসীমের দেখা নেই ।সবগুলো এঙ্গেল  থেকে দরকারি ছবি একা ম্যানেজ করতে পারছে না বিমল ।হঠাৎ দ্যাখে ,ধীর পায়ে ঢুকছে অসীম ।সামনে আসতেই এক চোট  গাল দিয়ে নিলো বিমল ।অসীমের চোখে  হাসি নেই, রাগ নেই ,আছে খালি এক অদ্ভুত শূন্যতা ।সে সব দেখার সময় ও পেলো না বিমল ।  চাপা গলায় বলল ,"মেয়ে বরের গাড়িতে  উঠছে । ক্লোজ ছবি নে কয়েকটা ঝটপট । চোখে কোল টা  ধরবি ।জল টলোমলো চোখের ছবি মেয়ের বাড়ির লোক বেশি চায় ,বুঝলি?" ঘাড় নেড়ে যন্ত্রের মতো ছবি তুলে  চলে অসীম ।

শেষ ছবিটা তোলার জন্য কনের মুখের খুব কাছাকাছি  ক্যামেরা টা নিয়ে যায় অসীম ।কনে মুখ তুলে এক ঝলক অসীম কে দেখেই চমকে যায়। এমুখ যেন তার চেনা ।কিন্তু মা-বাবার-মাসিদের কান্নায় মুহূর্তের মধ্যেই বাস্তবে  ফিরে  আসে সে । গাড়ির অন্য দিক দিয়ে তার বর ততক্ষণে উঠে পড়েছে ।হঠাৎই খেয়াল পড়ে  রিনার যে গাড়ির যেদিক দিয়ে ক্যামেরা ম্যান তার ছবি তুলছিলো,একটা হলুদ রঙের খাম ঠিক জানালার নিচের খাঁজে গোঁজা রয়েছে । আলতো করে খামটা খুলে দেখে গতরাতের তার বিয়ের মঞ্চে ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তের ছবি ।দুহাতে ধরা পান পাতার আড়ালে অপরূপ সুন্দরী তার মুখ, অসাধারণ দক্ষতার সাথে তোলা ।নিজের কোনো ছবি দেখে কোনোদিন এতো খুশি হয়নি রিনা ।

খামের ভিতর আরেক টা ছোট্ট কাগজ ও ছিল ।সেটা খুলে দেখলো যে সেটা আট বছর আগের রিনার  লেখা একটা চিরকুট ।শহর থেকে বহুদূরের একটা গ্রামের ক্লাস টেনের ছাত্রী লিখছে ক্লাস টুয়েলভের বৃত্তি পাওয়া অনাথ ফার্স্টবয়কে ,"আমার একটা ভালো ছবি তুলে দেবে ,অসীম দা ?"


Thursday, May 11, 2017

আমি ই সেই লোক


হালকা করে গলার টাই এর নট টা দেখেনিলাম। স্যুট টা একদম ঠিকঠাক মানিয়েছে। তারপর মধুকে ফোন করলাম।মধু, আমার সেক্রেটারি কাম ম্যানেজার কাম এভরিথিং। আজ কোথায় ডাক আছে সব তার ডায়রি তেই নোট আছে।আমি অত শত মনে রাখতে পারিনা।
ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলাম।নিজের সাবজেক্ট এর বাইরে প্রায় অন্য কোনো বিষয়েই  আগ্রহ বা দক্ষতা ছিল না। কিন্তু আজকাল আমি নিজেই নিজেকে নিয়মিত অবাক করে দিচ্ছি।আন্ডার দা সান প্রায় সব কিছুই আমি জানি দেখছি।গত পরশুই তো বলে এলাম যে পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপ গুলোতে ভারতীয় কমার্শিয়াল জাহাজ গুলোর কেন ব্যবসা করতে যাওয়া উচিত নয়। 
ওরা বলল টিআরপি নাকি হেব্বি বেড়েছে।জানেন আমার মধ্যে না  লজ্জা আর ভয় জিনিস টা একেবারে নেই,যাই বলিনা কেন সন্ধেগুলো কাটছে ভালো।পয়সা ও পাচ্ছি ভালোই।ওদের রিসার্চ টিম ই বলে দেয় যে আজ আমি ভিউয়ার দের কি খাওয়াবো। 

আত্মীয় দের বলে দিয়েছি যে আর যাই করো না কেন টিভি দেখে নিজেদের মতামত গঠন করো না ।কিন্তু তারা শুনলে তো।যদি এরা একবার জানত!! কি ঘটছে আর কে ঘটাচ্ছে পেছনে। ইংরাজি চ্যানেল গুলোতে শুনেছি বেশি মালপত্র দেয়।ভাবছি এই বয়েসে একবার ট্রাই মারব কিনা। ও হ্যাঁ, বলে ভুলে গেছি যে আমি ই সেই সবজান্তা বিশেষজ্ঞ যাকে আপনারা রোজ রাতে টিভিতে দেখেন,এনজয় করেন,পরে আলোচনা করেন,মজা পান।আমিও মজা পাই ,যখন শো শেষে চেক টা পকেটে ভরে ঠান্ডা গাড়িতে বাড়ী যাই, মজা পাই আপনাদের আগ্রহ দেখে,প্রস্তুত হই পরের দিনের জন্য। আরেকটা কথা, আমি কিন্তু একা নই।

Tuesday, May 9, 2017

এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ ...

--বলছিলাম  স্যার , ইন্টেলেকচুয়াল  প্রপার্টি রাইটস  আসার বহুযুগ আগেই আপনি কেস টা ঠিক বুঝে ফেলছিলেন কেমন করে বলুন তো?
~ মানে ? আপনার কথা টা পরিষ্কার করবেন একটু ?
--মানেটা এই যে এই পোড়ার দেশে আপনার সময়কার কেউ বোঝেনি যে তারা বা তাদের কাজ যদি বিখ্যাত হয়ে যায়,তাহলে অদূর ভবিষ্যতেই তাদের কাজ নিয়ে ঝাঁকিয়ে মশলামুড়ি বানানো হতে পারে।আপনি বহু বছর আগেই সেরকম সুযোগ না দিয়ে স্পষ্ট ভাবে বিশ্বভারতীকে  দিয়ে গেলেন কপিরাইট রক্ষার দায়িত্ব ।
~ওহ ! তা সেরকম দেখতে গেলে তো অনেক কাজ ই আমি শুরু করেছিলাম,কই ,আপনার নজর সেদিক গুলো এড়িয়ে যাচ্ছে কেন?
--আপনি স্যার,আপনি আমাকে  আপনি বলছেন ! এই ইন্টারভিউ আমার জীবন বদলে দেবে ।আমি আপনার প্রনাতির নাতির থেকেও ছোট ।
~আপনি-তুমি-তুই ,আবার রেগে গেলে এর বিপরীত পর্যায়ে সম্বোধন ! এত ব্যাকরণগত পরিবর্তন কথা বলতে বলতে করতে অসুবিধা হতে পারে,তাই সহজ পন্থাটা বেছে নিলাম।
--জানেন স্যার ,আমার কলিগরা কেউ  বিশ্বাসই করবে না যে আপনি এত ফ্রি-ফ্র্যাঙ্ক ইন্টারভিউ দিতে পারেন।তারা মাঝে মাঝেই এমন সব কথা বলে যে মাথা গারম হয়ে যায়।কিন্তু স্যার মুখের মত উত্তর আসেনা বলে চেপে যাই।পড়ার টেবিলের পেছনে দেওয়ালে মাদুর কাঠিতে আপনি আছেন স্যার , ভাট বকলে মটকা গরম হয়ে যায়। ওরা বলে ,আপনি নাকি সৌখিন দুঃখবিলাসী ,খালি বড়োলোকদের জন্য লিখতেন,জন্মসুত্রে যা আপনি নিজেও ছিলেন ।
~আর কি বলেন আপনার সহকর্মীরা ?
--বলে খাওয়া পরার চিন্তা ছিল না তো, আপনার প্রচুর টাইম ছিল ।
~সেটা কি আমার ক্রাইম ছিল ?
--এটা কিন্তু ভাল রাইম ছিল।
~"ডেঁপো" শব্দ টা আমার লেখনী তে লেখা হয়নি কখনো।এখন আফশোস হচ্ছে।
--খেপছেন কেন স্যার ,হিসেব করে দেখেছি কিলোপ্রতি আপনার লেখার দর লিস্টে প্রায় নিচের দিকে থাকছে, সে যে জাতের লেখাই আপনি লিখেন না কেন ! আজকাল অবশ্য অনেক জাতের লেখা বিক্রি হচ্ছে।  বলুন না,আপনি যে সব শব্দ অভিধান কে দান করে গেছিলেন,যেমন বেতার, তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদি,আমার মনে একটা শব্দ আছে, সে একজনের জন্য প্রযোজ্য,কিন্তু আপনি এটার একটা বাংলা প্রতিশব্দ দেবেন?
~কি শব্দ?
--মেগালম্যানিয়াক ।
~হুম।ভেবে জানাব ।আচ্ছা একটা কথা আপনি বলুন তো?বাংলায় কথা বলতে বলতে এত ইংরাজি বলেন কেন? কোন ব্রিটিশ কে দেখেছেন যে ইংরাজি বলতে বলতে স্প্যানিশ বলছে ?
--ইটস দ্য ইন থিং স্যার।মাঝে মাঝে ইংরাজি  ঝাড়লে কুল শোনায়।নো চাপস।
~নো চাপস! এটা কি ইংরাজি নতুন শব্দ    ?
--আপনি বুঝবেন না স্যার।আমরা বাংলা তে আরবান ডিকশনারি বানাব ।
~আর কি কি বানাবেন ?
--বাংলা বাচাও স্মৃতি স্তম্ভ । এর দুটো মানে আছে ।
--উদবোধনের দিন  বা শিলান্যাস এর  জন্য আমাকে    ডাকবেন না তো?    
--না স্যার । উদবোধনে বা শিলান্যাসে গিনেস রেকর্ড হোল্ডার আমাদের এখানে আছেন । অন্য কাউকে কোনও চান্স ই দেব না।
~আপনি কি উত্তেজিত ? অবশ্য সেটাই বয়েসের স্বভাব।
--নো স্যার, আমি উদ্দীপিত ।খালি সংরক্ষিত মেধার অভাব ।
~হতাশা উদ্গীরণ শেষ হলে আমি যাই     ?
--না স্যার, ইন্টারভিউ আপনার।আর আমি বকবক করে গেলাম।আসলে স্যার আপনি আমাদের অনেক আগেই বুঝেগেছিলেন যে ,"আমরা আড়ম্বর করি ,শেষ করি না !" এটুকু বুঝি যে আপনার চিন্তা ভাবনা গুলো বড্ড বেশী প্রগ্রেসিভ ছিল ।
~আমাকে উদযাপন না করে আমার কাজ আর চিন্তাধারাকে বেশী করে যাপন করলে বোধহয় ভাল করতেন। দীর্ঘ জীবন অনেক কিছু শিখিয়েছে।লেখায়   রেখে গেছি ।পারলে নেড়েচেড়ে দেখবেন ।
--সে তো বুঝলাম স্যার, ঐ যে বললাম স্যার সময় কে বোঝার মত সময় নেই আমার ।এই বছর প্রমোশন ডিউ কিনা।কিন্তু স্যার ,এই ইন্টারভিউ আমার জীবন বদলে দেবে স্যার।প্রমিস করছি প্রমোশন পেলেই ট্রাফিক সিগ্ন্যালে  আপনার গান বাজানো বন্ধের দাবীতে তিন লাইন লিখব ।
~আর কিছু করবেন ?
-----------------------------------------------------------------------------------
"এ বার কালী তোমায় খাবো",বিদ্ঘুটে এস এম এসের শব্দে ধড়ফড় করে ঘুম ভেঙ্গে   উঠে বসল, সাংবাদিক ক্যাবলাকান্ত ।বসের জন্য ডেডিকেটেড টিউন । মোবাইল আনলক করতেই মেসেজ ঢুকল,"সাড়ে আটটার মধ্যে পাঞ্জাবি গলিয়ে শান্তিনিকেতনী ঝুলিয়ে সদনে এস ছন্দ্রবদন, দেরী হলে কপালে নান্দনিক ক্যালানি জুটবে.........।"                                                                                                                                                                                                                                                       









Monday, May 1, 2017

সেই আড্ডার রেশ ধরে ...



ন্যাপলা হঠাত ডান হাতের তর্জনী ওপরের দিকে করে বলে উঠল ," স্যার ,অনেকেই অনেক কিছু বলছেন,আমিও কিছু
প্রশ্ন করব স্যার ? মানে খুব কিউরিয়সিটি হচ্ছে ।
--হু ।
--বলছিলাম কি ,ফেলুদা বিয়ে করলেন না কেন ?
চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে বিষম খেলেন লালমোহন বাবু,মগনলালের সুগন্ধী পানমশালা,হাতের চামচ থেকে মুখের বদলে নাকের দরজায় আঘাত করে ছড়িয়ে পড়ল, কিন্তু হাঁ বন্ধ হল না ! ছোকরা বলে কি !
--"আর কিছু ?",গম্ভীর কন্ঠে স্নিগ্ধ প্রশয়ের ছোঁয়া ...
--না মানে ,জানার তো অনেক কিছুই ছিল।যদি অভয় দেন তো বলি,খুড়ো যে ভাবে আমার কনুই তে রামচিমটি দিচ্ছেন,বেশীক্ষণ বাঁচার গ্যারান্টি নেই ।
--বলো,বলো ,আজ তো তোমাদের কথা শুনব বলেই এসেছি
-- আচ্ছা স্যার , এ বাংলায়  রিসেন্টলি একটাও পপুলার বেস্টসেলার রাইটার এল না কেন লালমোহন বাবুর পরে? দেশ জুড়ে জনতা অচেতন, নিরামিষ পড়ে ফাটিয়ে দিল, অবশ্য স্যার আপনার কিছুই অজানা নয়।আজকাল শুনছি,লেখকেরা নাকি কোন রঙ এর কালিতে লিখবেন সেটা নিয়েও তিনমাস ভাবে, কি লিখবে সেটা ভাবার আগে।
--মুচকি হেসে তিনি বললেন ,"বেশ ,বাকিদের কথাও একটু শুনি, তুমি কি একটা নন-কমারশিয়াল ব্রেক নেবে ন্যাপলা?"
সিধুজ্যাঠা বলে উঠলেন এবার,"আমার বক্তব্য একটু অন্য দিকে। আপনি না হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য পাননি।কিন্তু এখন তো অবস্থা সেরকম নয়, তাহলে আজ ও কেন শঙ্কুর কান্ড কারখানা নিয়ে একটাও সিনেমা বেরোল না? বাংলায় যদি নাও হয় , অন্য ভাষায় , ইংরাজিতে হতেই পারত । এত রিচ কন্টেন্ট ,এত দারুন রোমহর্ষক টান টান গল্প !! এ থেকে যদি সিনেমাপ্রেমীরা বঞ্চিত হয় তা তো হতাশার ,তাই না ?"   এবার নকুড় বাবুর পালা ।হাত কচলে বলে উঠলেন ,""স্যার, তিলুবাবুর লাইব্রেরী থেকে মাঝে মাঝে ধার নিয়ে আপনার প্রায় সব গল্পই আমার পড়া। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব স্যার ? খগম না রতন বাবু না বঙ্কুবাবু না আপনার অনন্য অনুবাদ গুলো !! এই যে ধারা টা আপনি তৈরি করে দিয়ে গেলেন,সেটা আর কেউ ধরতেই পারল না।অবশ্য সেই জন্যই আপনি আপনার জায়গায় ।কিন্তু লেখা নিয়ে চিন্তা নিয়ে ভাবনা  নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের খুব অভাব দেখি । আবেগে ভেসে একটু বেশী বলে ফেললাম।অপরাধ নেবেন না স্যার ।মগনলাল আরামসে আড্ডা শুনছিলেন , হঠাত বলে উঠলেন,"আমার যেটা মনে হয় স্যার, গাড়ি কেন আর এগোল না, তার পিছনে একটাই কারন, দুনিয়াকা সবসে বড়া রোগ, কি কেয়া কহেঙ্গে লোগ , কি আঙ্কেল ঠিক বলেছি?"
ডান পা টা নামিয়ে  ,তার উপর বাঁ পা টা আলতো করে রেখে ধীরে ধীরে বলে উঠলেন স্রষ্টা ,"আপনাদের প্রায় প্রত্যেকের কথাই যুক্তিপূর্ণ   ,সে বিষয়ে সন্দেহ নেই  । কিন্তু আমার পরিস্থিতি অন্য ছিল ।অনেক সিদ্ধান্ত , অনেক যতি চিহ্ন আমায় অনেক ক্ষেত্রে নিতে হয়েছে যার পেছনে বহু অকথিত কাহিনী আছে যেগুলো আজ আমি জানানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা । আর আজকাল যা ঘটছে তার উপর তো আমার কোনও নিয়ন্ত্রনও নেই ,তাই না সিধুজ্যাঠা ? চিন্তনের ফারাক এসেগেছে, সময় ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে ।বদলেছে অনেক সমীকরণ।নিয়মিত খুঁটিয়ে কাগজ পড়া আমার দৈনিক অভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল ।আজ তা আমায় কিঞ্চিত ব্যাথা দেয় ।বোধহয় সময় এসেছে বোঝার যে আমরা কি খাচ্ছি আর আমাদের কি খাওয়ানো হচ্ছে তার পার্থক্য । তোমরা প্রত্যেকে আমার ভীষণ প্রিয় , হয়ত খুব খুঁটিয়ে দেখলে তোমাদের অনেকেই হচ্ছ ভিন্ন ভিন্ন সময়ের,পরিস্থিতির ভিন্ন ভিন্ন আমি। তোমরা নিজেরাই বুঝে নাও, কেন কখন আমি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছি বা নিতে বাধ্য হয়েছি ।কারন তোমরাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছ ।  আজ ও ।" নিজেকে চেয়ার একটু এলিয়ে দিয়ে অল্প  হাসেন স্রষ্টা । সৃষ্টি দেরও চোখে জল ।এবারের মত বিদায় আসন্ন । ্সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে একে একে হাত মেলাতে গেলেন আর মিলিয়ে গেলেন তাঁর সাথে। সবাই ,শুধু ফেলুদা বাদে ।

মুখোমুখি দুজনে।  চোখে চোখ রেখে , সামনে দাবার বোর্ড টা পাতা । বোড়ে একঘর এগিয়ে বলে উঠলেন তিনি ,"সব ই তো শুনলে , তুমি কিছু আমাকে বলবে না ?" সেই চিরাচরিত একপেশে হাসিটা হেসে ফেলুদা বলল,"নিজেকে নিজেই কিছু জানাতে হলে সেতো নীরবেই জানানো যায় , তাই না ?..."  আপনার চাল ...